বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১১

জামাতের হাত কত লম্বা???!!!!!

টবি ক্যাডম্যান নামে একজন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইনজীবীকে নিয়ে একটা ক্যাচাল হয়েছিল। সম্প্রতি তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কারণ হিসেবে পত্রিকা এবং ব্লগে প্রকাশিত খবর ও মন্তব্যে বলা হয়েছিল পরিচয় গোপন করে তিনি ঢুকতে চেয়েছিলেন।

২৪ ডিসেম্বর ২০১১ তার ওয়েব সাইটে এ বিষয়ে তিনি (Visa Issue: A Response) একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি দাবি করেছেন, মিথ্যা পরিচয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অভিযোগ করে প্রকাশিত খবরের সত্যতা নেই। অভিযোগগুলো তুলেছে কিছু ব্যক্তি, সরকারের দায়িত্বশীল কেউ নয়। অতএব সরকারের বিরুদ্ধে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

টবি ক্যাডম্যান জানান যে, ৫ আগস্ট ২০১১ তারিখে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি যথানিয়মে ‘অন অ্যারাইভ্যাল ভিসা’র জন্য আবেদন করেন, ফি জমা দেন। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই তার ভিসা অগ্রাহ্য করে তাকে দেশ ত্যাগ করতে পরামর্শ দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে তাকে বলা হয় যে তাকে প্রবেশ করতে না দেয়ার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের আদেশ রয়েছে। সরকারিভাবে তাকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ অর্থ্যাৎ অবাঞ্ছিত ব্যক্তি বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, বক্তব্য অনুসারে তিনি ‘যুদ্ধাপরাধীদে’র রক্ষা করতে এসেছেন এবং ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করেছেন।

ঘটনা হলো ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, অসত্য তথ্য দিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌছেছিলেন টবি। পরে তিনি নিজেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর অভিযুক্তদের আইনজীবী বলে দাবী করেন। যে কারণে অভিবাসন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন। পরে ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনের হস্তক্ষেপে তিনি বৃটেনে ফিরতে সক্ষম হন।

টবি ক্যাডম্যান এ খবরটিকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত’ বলে বর্ণনা করেছেন।



কি আছে বিবৃতিতে

এক. মামলার হুমকি ও বৃটিশ হাইকমিশনের ভূমিকা ছিল না

বিবৃতিতে তিনি ‘প্রকৃত ঘটনা’ বর্ণনা করেন এভাবে, ‘‘নাগরিক ফোরাম আয়োজিত এক সেমিনারে যোগ দিতে ২০১১ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা বিমানবন্দরে পৌছলে আমাকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানান হয়। আমি বসনিয়ার সারাজেভো থেকে ঢাকায় আসি। আমি যেহেতু এর আগেও ঢাকায় পৌঁছবার পর অন অ্যারাইভাল ভিসা পেয়েছি, অতএব এবার আমাকে ভিসা দেয়া হবে না এমন কোন সন্দেহ আমার মাঝে কাজ করে নি।’’

ঢুকতে বাধা দেবার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি জানতাম যে তারা শুধু ওপরের হুকুম তামিল করছে। আমার প্রতি তাদের আচরণ ছিল অত্যন্ত সৌজন্যমূলক ও শ্রদ্ধাপূর্ণ। এমনকি ৫ আগস্ট ২০১১ তারিখে আমাকে যখন বাংলাদেশ থেকে বের করে দেয়া হয়, তখনো তারা আমার সাথে অত্যন্ত সম্মানজনক আচরণ করেছে এবং আমার নিরাপত্তার প্রতি দৃষ্টি রেখেছে।’’

পুরো ঘটনায় বৃটিশ হাইকমিশনের কোনো ভূমিকা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যদিও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, তারপর হাইকমিশনের বিরুদ্ধেও এ গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে যে, তারা একটি অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে।’’

টবি জানান, ঢাকা বিমানবন্দরে তাকে নিয়ে বৃটিশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্টতা ছিল তার জন্য ভিসা সংগ্রহ করা, তাকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেয়া নয়।


দুই. অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া হয়েছে অনেকবার

বসনিয়ার সারাভেজো থেকে দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘২০১০ সালের অক্টোবরে আমি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সেমিনারে অংশ নিতে লন্ডন থেকে এসেছিলাম বলে আমার পক্ষে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে আগেই ভিসা নেয়া সম্ভব হয়েছিল। এর পর যে ক’বার ঢাকায় এসেছি, আমাকে আসতে হয়েছে বসনিয়া থেকে। কারণ বসনিয়ায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে আমাকে দীর্ঘদিন কাটাতে হয়েছে এবং আমার পরিবার বসনিয়ায় অবস্থান করে। বসনিয়ায় বাংলাদেশের কোন দূতাবাস বা কনস্যুলেট না থাকায় সরাসরি ঢাকা এসে ‘অন অ্যারাইভ্যাল ভিসা’ নিতে হয়েছে এবং এতে কোন বিঘ্ন ঘটেনি।’’


তিন. ভিসা না দেবার বিষয় আগে জানানো হয়নি

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আরেকটি অভিযোগ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে আমার শেষ সফরের সময় জানিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি ভবিষ্যতে ‘অন অ্যারাইভ্যাল’ ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে আমাকে ভিসা দেয়া হবে না।’’

এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘২০১১ সালের মে মাসে আমেরিকার যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক দূত স্টিফেন জে র‌্যাপ আমাকে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে এক ভোজসভায় আমন্ত্রণ। ভোজে আইনমন্ত্রী, ট্রাইব্যুনালের বিচারকবৃন্দ ও রেজিস্ট্রার উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনালের বিধিমালায় যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা নিয়ে আমাকে বলার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বিদেশি আইনজীবী নিয়োগে ট্রাইব্যুনালের আইনগত কাঠামোতে সংশোধন করা এবং ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করা, যদি ট্রাইব্যুনাল বিদেশি আইনজীবীদের উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানানোর মতো কোন প্রসঙ্গ সেখানে উত্থাপিত হয়নি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শফিক আহমেদের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল শুধুমাত্র ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে। তাকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম আমাদের ডিফেন্স টিমের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিজনেস ভিসা ইস্যুর ব্যাপারে তার সহযোগিতা কামনা করে। কিন্তু সে সম্পর্কে তিনি কোন ইঙ্গিত দেননি যে আমাকে ভিসা দেয়া হবে অথবা বাংলাদেশে পুনরায় প্রবেশের ব্যাপারে কোনো হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেননি।’’


চার. বিজনেস ভিসার আবেদন করেননি কখনো

তিনি জানান, কখনো বিজনেস ভিসায় বাংলাদেশে আসার জন্য লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করেননি, বরং প্রতিবার তিনি ঢাকায় এসেছেন সেমিনারে অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্যে।

গত মে মাসে (২০১১) বাংলাদেশে তার শেষ সফরের সময় টবি ক্যাডম্যান তাকে ও তার আরো দু’জন সহযোগী আইন বিশেষজ্ঞকে অভিযুক্তদের পক্ষে আইন উপদেষ্টা করায় আইনমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী ‘বিজনেস ভিসা’ প্রদান করার জন্য।


পাঁচ. সুষ্ঠু বিচারে আইনজীবীদের বিজনেস ভিসা দরকার

ক্যাডম্যান বলেছেন যে, ‘‘আমি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে আশা করি যে বাংলাদেশ সরকার আমার দীর্ঘমেয়াদী বিজনেস ভিসার আবেদন বিবেচনা করবেন যাতে আমি আমার মক্কেলদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি, যারা আমাকে তাদের আইনগত উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেছেন। আমি এ ব্যাপারে আমার অবস্থান নিশ্চিত করতে চাই যে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য বা বাংলাদেশের কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাহানিকর বা বিব্রতকর কোন মতো ভূমিকা রাখার কোন ইচ্ছা আমার নেই। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে যে আমি যাদের প্রতিনিধিত্ব করছি তারা যথানিয়মে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মান অনুযায়ী সুষ্ঠু বিচার লাভ করুক।’’

তার বিবৃতি প্রকাশের পর সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন জবাব দেখা যায়নি।

অথচ এব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। যেভাবে জামাতের হাত লম্বা হচ্ছে তা ভেঙ্গে গুড়িয়ে না দিলে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এরা কলঙ্ক লেপনে সামান্যতম সুযোগও হাতছাড়া করবে না।

1 টি মন্তব্য:

  1. এটা আমার প্রথম লেখা পোস্ট। বেশ ভাল লাগছে নতুন ব্লগ বানাতে পেরে।

    উত্তরমুছুন